
ঈশ্বরদীতে বোরো ধানের বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখ হাসি নেই। ধান কাটার ভরা মওসুমে চড়া মজুরি দিয়েও মিলছে না শ্রমিক। এক মণ ধান দিয়েও মিলছে না শ্রমিক। বৃষ্টি ও বাতাসে অনেক জমির ধান ন্যুয়ে পড়েছে। মাঠেই নষ্ট হচ্ছে কৃষকের ধান। শ্রমিকের অভাবে ধান কেটে সময় মতো ঘরে তোলা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
সরেজমিনে ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালী ধান। আগাম জাতের ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। ধান ঘরে তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও কৃষাণীরা। অনেকেই মাঠেই ধান শুকিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার ধান সিদ্ধ ও গরুর খড়ের জন্য কাঁচা ধানের খড় শুকাচ্ছেন।
শ্রমিক সংকটের কথা উল্লেখ করে ঈশ্বরদীর মুলাডুলির বাঘআচলা গ্রামের আজম ব্যপারী বলেন, মাঠের অধিকাংশ ধান পেকে যাওয়ায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। এক মণ ধান দিয়েও মিলছে না একজন শ্রমিক। এ এলাকায় ৯শ’ থেকে এক হাজার টাকা মণ ধান। একজন শ্রমিকের মজুরি ৯০০ টাকা। পাশাপাশি একবেলা খেতে দিতে হয়। খাওয়া বাবদ ১০০ টাকা হিসাব করলে শ্রমিকের মজুরি এক হাজার টাকা হচ্ছে।
একই গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ধানের আবাদ ভাল হয়েছে এতে কৃষকদের আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। সার-কীটনাশকের অতিরিক্ত দামের পাশাপাশি এবার দিনমজুরের চড়া মজুরির কারণে শেষ পর্যন্ত আর লাভ মুখ দেখবে না কৃষক। এ মাঠে আগের চেয়ে ধানের আবাদ কমেছে। এভাবে ধানে লোকসান হতে থাকলে আবাদ আরো কমে যাবে।
মজুরি বেশি নেওয়ার বিষয়ে ধানকাটা শ্রমিক সেলিম বলেন, খাদ্য সামগ্রীসহ সকল জিনিসপত্রের যে দাম তাতে তো মজুরি বেশি নিতেই হবে। যে মজুরি পাই তা দিয়ে চাল-ডাল কিনতেই শেষ হয়ে যায়। তেল, চাল, ডালের দাম প্রতিদিন বাড়ছে। মজুরি বেশি না নিলে সংসার চলবে কি করে।
আরেক শ্রমিক সুমন বলেন, আমরা প্রতিবছর যে টাকা আয় করি তা দিয়ে আমাদের সংসারই চলে না। সংসার চালানোর পরও ভবিষ্যতের জন্য কিছু রাখতাম। এখন যা পাই তা দিয়ে সংসার ঠিকমতো চলে না।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, ঈশ্বরদীতে এবার ২৭০৬ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের ফলন খুব ভাল হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের উন্নতমানের ধানের বীজ ও সার বিতরণ করেছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের সময়মতো নানান পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের পাশে রয়েছে।